অনলাইনে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে চান? দরিদ্র ও মেধাবি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যেনো অর্থের অভাবে বন্ধ না হয় সেজন্য বাংলাদেশ সরকার উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। উপবৃত্তি আবেদনের জন্য এখন আর সংশ্লিষ্ট অফিসে দৌড়াতে হয় না বরং অনলাইনেই এই আবেদন সম্পন্ন করা যায়। অনেকে উপবৃত্তির জন্য আবেদন আবেদন করার অনলাইম নিয়ম জানতে গুগলের দারস্থ হন। তাই, আমাদের আজকের আয়োজনে আমরা আপনাদের জানাবো অনলাইনে উপবৃত্তি আবেদনের নিয়ম গুলো নিয়ে।
আপনি যদি দরিদ্র এবং মেধাবি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন কিংবা আপনার পরিচিত কেউ এমন থাকে তাহলে দু’মিনিট সময় ব্যয় করে জেনে নিন অনলাইনে উপবৃত্তি আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে।
তো কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আমাদের মূল আলোচনায়।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার সময় যেটা মাথায় রাখতেই হবে সেটা হলো আবেদনের সময়সীমা আছে কিনা।
অনলাইনে উপবৃত্তি আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেয়া থাকে সরকারের পক্ষ থেকে। এই সময়ের মধ্যেই আবেদন করতে হয়। এই বছর ষষ্ঠ শ্রেণী ও একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত উপবৃত্তির অনলাইন আবেদনের সময়সীমা ছিলো ২৭ মার্চ পর্যন্ত।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রতিবারের মতো এবারেও কারা উপবৃত্তি পাবে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান এর আওতায় পড়বে এবং ফরম পূরণ করার নিয়মাবলী ও সময়সীমা জানিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কিভাবে তথ্য সমূহ নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে এন্ট্রি করবে সে বিষয়েও বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে তারা এ বছর জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ তারিখ অনলাইনে উপবৃত্তি আবেদনের সার্কুলার প্রকাশ করে।
একনজরে:
- সরকারি বৃত্তির জন্য আবেদনপত্র আহ্বান: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ খ্রি.।
- অনলাইন আবেদন শুরু: ১ লা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খি.।
- প্রথম দফা আবেদনের শেষ সময়: ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি.।
- দ্বিতীয় দফায় আবেদনের শেষ সময়: ৭ মার্চ ২০২৩।
- চূড়ান্ত আবেদনের শেষ সময়: ১৫ মার্চ ২০২৩ খ্রি.।
আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর এই বিষয়ক কমিটি ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব স্ব বিদ্যাপীঠের মাধ্যমে এইচএসপি-এমআইএস (HSP-MIS) এ এন্ট্রি করা তথ্য যাচাই বাছাই করবেন। যাচাই বাছাই শেষে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার এর মাধ্যমে তথ্য সমুহ এইচএসপি-পিএমইএটি (HSP-PMEAT) তে পাঠাবেন।
এই PMEAT ই হলো প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টই উপবৃত্তি দিয়ে থাকে। এখানে পাঠানোর পরবর্তী নোটিশেই জানা যাবে কারা উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে তাদের তালিকা। শিক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই বিষয় গুলো জানতে পারবে। তবে www.pmeat.gov.bd এই লিংকে প্রবেশ করেও এই বিষয়ক হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে।
অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদনের নিয়ম
এ বছর উপবৃত্তির জন্য আবেদনে যেসব তথ্য লাগবে তা পর্যায়ক্রমে জানিয়ে দিচ্ছি:
- শিক্ষার্থীর ছবি: অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদনের জন্য যে ছাত্র বা ছাত্রী আবেদন করছে, তার সদ্য তোলা ছবি লাগবে।
- শিক্ষার্থীর জন্মসনদ: উক্ত ছাত্র বা ছাত্রীর জন্ম সনদ লাগবে। জন্ম সনদের নম্বরটি অবশ্যই ১৭ ডিজিটের হতে হবে।
- অভিভাবকের এনআইডি কার্ড: যে শিক্ষার্থী আবেদন করছে তার লিগাল অভিভাবক যে, হতে পারে তার পিতা-মাতা বা তাদের অনুপস্থিতিতে অন্য যে কেউ তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে। এটাও ১৭ ডিজিট হতে হবে। কোনো কারণে তা যদি ১৭ ডিজিটের কম হয় সেক্ষেত্রে পূর্বে জন্মসাল এবং প্রয়োজনীয় শূণ্য বসিয়ে ১৭ ডিজিট বানিয়ে নিতে হবে।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: উপবৃত্তির অর্থ পাওয়ার জন্য বৈধ এবং সচল ব্যাংক একাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং এর নম্বর দিতে হবে। শিক্ষার্থী যদি পিতা বা মাতার ব্যাংক একাউন্টে টাকা নিতে চায়, তবে তাদের স্ব-স্ব এনআইডি কার্ড দিয়ে একাউন্ট খুলতে হবে।
প্রথমেই উপবৃত্তির জন্য আবেদনকারীকে এই বিষয়ক একটি আবেদন পত্র সংশ্লিষ্ট বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে। তিনি অনুমোদন দিলে তারপর মাউশি’র ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে উপবৃত্তির অনলাইন আবেদন ফরম বের করে তা উপরে উল্লিখিত তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।
উপরে উল্লিখিত তথ্য ছাড়াও অনলাইন আবেদন ফরমে কিছু তথ্য চাওয়া হবে তা সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে। অন্যথায় আবেদন সঠিক হলেও চূড়ান্ত যাচাইয়ে প্রার্থী বাদ পড়ে যেতে পারে।
৬ষ্ঠ ও একাদশ শ্রেণির উপবৃত্তি আবেদন ফরম
প্রতি বছর গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সরকার উপবৃত্তি আবেদন নিয়ে থাকে। আবেদন ফরম যাচাই বাছাই শেষে সঠিক তথ্য প্রদানকারীদের মধ্য হতে যোগ্য শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হয়।
- উপবৃত্তি আবেদনের জন্য প্রথমে অনলাইন থেকে উপবৃত্তি আনেদন ফরম ডাউনলোড করতে হবে।
- ফরম ডাউনলোড করার পর প্রিন্ট করুন
- ৪ পাতার ফরমটি সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন
- পূরণ করা শেষে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিন
- পরবর্তীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করবেন।
আবেদন ফরম পূরণ করার নির্দেশনাবলি
একজন ছাত্র/ছাত্রী শুধুমাত্র একটি আবেদন দাখিল করতে পারবেন এবং একটি ফোন নাম্বার ব্যবহার করা যাবে।
ভাই-বোন, দাদা, নানা কাউকে অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করা যাবে না। তবে যদি পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে সেক্ষেত্রে অভিভাবক হিসাবে তারা বিবেচিত হবেন।
সরকারি উপবৃত্তি কারা পাবে?
অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করলেই যে সবাই পেয়ে যাবে বিষয়টি এমন না। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একটা কমিটি থাকে যারা সর্বোচ্চ যাচাই বাছাই করে থাকে উপবৃত্তি দেয়ার আগে যাতে করে সঠিক প্রার্থীরাই এই সুবিধাটা ভোগ করতে পারে। উপবৃত্তি দেয়ার জন্য তারা যেসব বিষয় দেখে থাকে তা হলো:
- অভিভাবকের বাৎসরিক আয়: আবেদনকারীর বৈধ অভিভাবকের বাৎসরিক আয় যদি ১ লক্ষ টাকার নিচে হয় তাহলে সে উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবে।
- অভিভাবকের স্থাবর সম্পত্তি: অনলাইনে উপবৃত্তির জন্য আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীর অভিভাবকের মেট্রোপলিটন এলাকায় ০.০৫ শতাংশ এবং এর বাইরে ০.৭৫ শতাংশ জমি থাকলে বা এর কম থাকলে সে উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবে।
যেসব ক্ষেত্রে সঠিক আবেদন করার পরেও আবেদনকারী উপবৃত্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় সেগুলো হলো:
- অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ভাতা প্রাপ্ত: শিক্ষার্থী যদি অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ভাতা প্রাপ্ত হয় কিংবা তার অভিভাবক যদি শিক্ষা ভাতা গ্রহণ করে থাকে তাহলে সে উপবৃত্তি পাবে না।
- ট্যালেন্টপুল বা জেনারেল বৃত্তি প্রাপ্ত: শিক্ষার্থী যদি মেধা কোটা বা সাধারণ মেধা কোটায় বৃত্তি প্রাপ্ত হয় তাহলে সে উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবে না।
বিশেষ ক্ষেত্রে নবম শ্রেণী শিক্ষার্থী বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। সরকার উপবৃত্তি দেয়ার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো নির্বাচন করে থাকে। এখন কোনো ছাত্র বা ছাত্রী যদি কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বিদ্যাপীঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে তারপর দূরবর্তী এলাকায় গিয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়, সেক্ষেত্রে সে শুধুমাত্র অনলাইনে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। কিন্তু, নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন নিয়ে শেষ কথা
উপবৃত্তির আবেদন অনলাইনে কিভাবে করতে তা আপনি নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন, যদি এতক্ষণ আমাদের লেখাটি মন দিয়ে পড়ে থাকেন।
আবেদনকারী নিজের বিদ্যালয় থেকেই এই অনলাইন আবেদন করতে পারবে। তবে নিকটস্থ কম্পিউটারের দোকান থেকেও কাজটি করে নেয়া যাবে।
আশা করি উপবৃত্তির জন্য অনলাইন আবেদন করার নিয়ম নিয়ে আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।