বেশিরভাগ মানুষের পেটের মেদ কমানোর উপায় জানা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ মানুষই অত্যধিক পরিমাণে পেটের অতিরিক্ত চর্বি সমস্যায় ভুগছেন। তবে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে তাদের অনেকেই এটাকে গুরুত্বের সহিত না দেখে খুব হেলায় ফেলে রাখেন।
পেটের অতিরিক্ত মেদ-চর্বি একদিকে যেমন দেহের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে অন্যদিকে বিভিন্ন রোগের ও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অবাক হচ্ছেন! অবাক হলেও এটাই সত্য।
কিভাবে কিভাবে পেটের মেদ কমানো যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে পেটের মেদ কমানোর উপায় হিসেবে অনেকেই অনেক পদ্ধতি সাজেশন দেন। অনেকে আবার অতিরিক্ত ডায়েট করতে গিয়ে হীতে বিপরীত ফলাফল পান। তাছাড়া এরকম না খেয়ে থাকার কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে।
তাই, আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্য পেটের মেদ কমানোর সঠিক সহজ ও কার্যকরী ৮টি উপায় নিয়ে জানবো যা ফিটনেস ট্রেনার ও বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
পেটের মেদ কমানোর উপায়
পেটের মেদ বাড়ার পিছনে বহু কারণ রয়েছে, এবং সবার কারণ আলাদা আলাদা হতে পারে। আপনিও কি পেটের মেদ এর সমস্যায় ভুগছেন? সমস্যা সমাধান করার চেয়ে সমস্যা বের করাই কঠিন।
আপনার পেটের মেদ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ খুঁজে পেলে কমানোর উপায় বের করা খুব বেশি কঠিন হবেনা। সুতরাং, আপনাকে পেটের মেদ কমানোর আগে বৃদ্ধি কেন পাচ্ছে তা খুঁজে বের করা দরকার।
তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক পেটের চর্বি বৃদ্ধির পিছনে কি কি কারণ রয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক।
পেটের অতিরিক্ত মেদের কারণ কি?
হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, এমনকি উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই পেটের অতিরিক্ত মেদ। পরিবারের কারো এই সমস্যা থাকলে বাকিদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া হরমোনজনিত কারণে কিংবা বয়স বৃদ্ধির সাথেও পেটের মেদের সংযোগ রয়েছে।
এছাড়া আপনার যেসব ভুলের জন্য পেটের ফ্যাট হয়ে থাকে, চলুন সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক;
১। অস্বাস্থ্যকর খাবার
বর্তমানে এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যারা জাঙ্ক ফুড (Junk food) খেতে পছন্দ করে না। বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া, মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলোকে আমরা এককথায় জাঙ্কফুড বলতে পারি।
জানেন কি? এই জাতীয় খাবার আমাদের দেহে ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা আমাদের বিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া হ্রাস করে। ফলস্বরূপ পেটের মেদ বেড়ে যায়।
২। দুঃশ্চিন্তা
বর্তমানে ভয়ানক এক রোগের নাম দুঃশ্চিন্তা। এমন কি কেউ আছে, যে এর আওতাভুক্ত নয়? না, এমন মানুষ বর্তমানে খুঁজে বের করা বড়ই কঠিন কাজ।
দুশ্চিন্তা আবার পেটের মেদ কি করে বাড়ায়? এটাও কি সম্ভব? জি পেটের বাড়তি মেদের জন্য দুঃশ্চিন্তা অনেকাংশেই দায়ী।
মানুষ যখন ডিপ্রেশন এ থাকে, দুশ্চিন্তা করে তখন তার দেহের অ্যাড্রিনাল (Adrenaline) গ্রন্থি এক ধরনের হরমোন তৈরি করে, যা আমাদের যকৃত থেকে চিনি নিঃসরণ করে। এটা পেটের চর্বি বৃদ্ধি করে থাকে।
৩। শারীরিক পরিশ্রম না করা
বর্তমান যুগ যান্ত্রিক যুগ। যন্ত্র আমাদের একদিকে দিয়েছে আরাম, অন্যদিকে করে তুলেছে অলস। হ্যাঁ এটাই সত্যি যে, মানুষ দিন দিন ফ্যাটিগ বা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
পূর্বে মানুষ যেখানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পায়ে হেঁটে যেতো, আমরা সেখানে রিক্সা, অটোরিক্সা আরও বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করছি।
এমনকি সিড়ির বদলে ব্যবহার করছি লিফট। দৈনন্দিন জীবনে যতটুকু পরিশ্রম প্রয়োজন আমরা তার একাংশও করছি না। ফলস্বরূপ বাড়ছে আপার পেটের ফ্যাট।
৪। অনিয়মিত ঘুম
পড়াশোনা, কাজ কিংবা দুঃশ্চিন্তার কারণে প্রায় সবার মধ্যেই অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস দেখা যায়। রাত জেগে অনেকে কাজ করে।
ফলে দেহে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়ে ক্ষিদে বাড়ায়। যার ফলে অতিরিক্ত খাবার যোগ হয় খাদ্যতালিকায়।
পেটের মেদ কতটুকু কমানো দরকার?
আমাদের শরীরের উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কতটুকু ওজন হওয়ার দরকার এটা ঠিক করে দেয় বডি মাস ইনডেক্স। বডি মাস ইনডেক্স কিভাবে বের করে?
- ওজন মেপে নিন
- আপনার উচ্চতার মেপে এটিকে মিটারে কনভার্ট করুন।
- উচ্চতার মিটার পরিমাপকে স্কয়ার করুন।
- এবার ওজনকে উচ্চতার স্কয়ার দ্বারা ভাগ করুন।
উদাহরণস্বরূপ কোনো ব্যক্তির ওজন ৭০ কেজি এবং উচ্চতা ১.৭ মিটার। তাহলে তার BMI (Body Mass Index) = ৭০/(১.৭*১.৭)= ২৪.২২।
পেটের মেদ কমানোর উপায় সমূহ
পেটের মেদ কমানো খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তবে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কিছু পরিবর্তন আনলে আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলতে পারেন আপনার পেটের অতিরিক্ত মেদ।
১. স্বাস্থ্যকর খাবার
পেটের অতিরিক্ত ভুড়ি কমোনোর উপায় খোঁজার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার আছে তো? যদি না থাকে, তবে আজকেই তাদের যোগ করে নিন আপনার খাদ্য তালিকায়।
ওটস রাখতে পারেন আপনার সকালের নাস্তায়। দুধ রাখতে পারেন, তবে সেটা অবশ্যই ফ্যাট ফ্রি হতে হবে। লাল চালের ভাত, গমের রুটি, ওটস পেটের মেদ কমাতে খুবই কার্যকরী।
ফলমূল, শাকসবজি খেতে পছন্দ করেন না? আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি যোগ করতে হবে। এগুলো মেদ বা চর্বি ঝরাতে অনেক সাহায্য করে। কম মসলা ও কম তেলযুক্ত খাবার খান।
২. পেটের মেদ কমাতে এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার
উপরের পেটের মেদ কমানোর উপায় খোঁজার আগে আপনার খাদ্যতালিকা থেকে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার আজই বাদ দিয়ে দিন। যতদুর সম্ভব কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
- ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া পেটের মেদ বাড়াতে খুবই কার্যকর, তাই এড়িয়ে চলুন এমন খাবার।
- অতিরিক্ত মসলা ও তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে।
৩. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
পানির অপর নাম জীবন সেটা আমরা সবাই জানি। পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে পানি।
পানি আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে চেষ্টা করুন।
৪. মিষ্টি জাতীয় খাবার ও ড্রিঙ্ক এড়িয়ে চলুন
যেকোন ধরনের মিষ্টি খাবার আমাদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।যা দেহে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে মেদ সৃষ্টি করে।
তাই সব ধরণের মিষ্টিজাতীয় খাবার এমনকি সফট পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৫. প্রোটিন জাতীয় খাবার
অনেকের ধারণা কম খেলে তাড়াতাড়ি ওজন কমানো যায়। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হঠাৎ খাবার কমিয়ে দিলে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, শরীর অসুস্থ হয়ে পরে।
প্রোটিনযুক্ত খাবার মেদ কমাতে খুবই কার্যকরী। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে এমন খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাংস এসব খাবার যুক্ত করুন আপনার খাদ্যতালিকায়।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম
অনেকে ভাবেন কম ঘুম ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি ভুল ধারণা। বরং কম ঘুমের ফলে ক্ষিদে বেড়ে যায়।ফলে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহনের ফলে ওজন আরো বেড়ে যায়।
তাই পরিমিত পরিমাণে ঘুমাতে চেষ্টা করুন। রাত না জেগে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে এবং দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
৭. পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
পেটের মেদ কমানোরজিন্য কিছু অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু ভালো অভ্যাস করাও জরুরী। নিচের এই পানীয়গুলো ফ্যাট, চর্বি কাটতে দারুন কার্যকরী।
- লেবু জল :
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু জল খান। এক গ্লাস গরম পানিতে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে নিন, সাথে এক চামচ মধু।
এটি আপনার আপার ফ্যাট কমাতে খুবই উপকারী।
- আদা জল :
আদা ফ্যাট কমাতে খুবই কার্যকরী। এক কাপ গরম পানির সাথে কয়েক টুকরা আদা মিশিয়ে চায়ের মতো পান করে নিন। এটি আপনার মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
- গ্রিন টি :
বর্তমানে গ্রিন টি মেদ কমাতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পানীয়। এটি অতি সহজেই আপনার দেহের মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন গ্রিন টি। এটি খুব সহজেই আপনার মেদ কমাতে ভূমিকা রাখবে।
পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম (ছবি সহ)
পেটের মেদ কমানোর উপায় হিসেবে ও দ্রুত কার্যকরী ফলাফল পেতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। উপরের সবগুলো অভ্যাসের সাথে আপনার প্রাত্যহিক রুটিনে যোগ করে নিন এমন কিছু যোগব্যায়াম পদ্ধতি যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
চলুন পেটের মেদ কমানোর কিছু সহজ ব্যায়াম শিখে নেয়া যাক;
১। লেগ রেইস ব্যায়াম ( leg raises exercise )
- এই পদ্ধতিতে প্রথমেই মাটিতে শুয়ে দুই হাত শরীরের পাশে সোজা টানটান করে রাখতে হবে।
- দুই পা’কে জেড়া জোড়া করে নিশ্বাস ছাড়তে হবে এবং ৯০ ডিগ্রি সোজা করে তুলে রাখতে হবে।
- এরপর নিশ্বাস নিতে নিতে পা জোড়া অবস্থায় নামাবেন।
- খেয়াল রাখতে হবে মাথা, পিঠ, কোমর যেন মাটি থেকে একটুও না উঠে।
- এইভাবে মোট দশবার করে একটি সেট সম্পূর্ণ করবেন। প্রথমে এটি দুইবার এরপর আস্তে আস্তে বাড়াবেন।
২। ক্রাঞ্চেস ব্যায়াম ( crusnches exercise )
- প্রথমে সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন।
- পা দুটো সামান্য ফাঁকা রেখে ভাঁজ করে নিন।
- হাত দুটো মাথার দুই পাশে অর্থাৎ কানের পেছনে অথবা চাইলে সামনের দিকে সোজা করে রাখতে পারেন।
- এবার আস্তে করে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে উপরের দিকে উঠুন এবং খেয়াল রাখবেন, ঘাড়ে যেনো কোনো চাপ না পড়ে।
- এরপর নিশ্বাস নিতে নিতে নিচে নামুন, তবে খেয়াল রাখবেন মাথা যেনো মেঝেতে না লাগে।
এভাবে ১০-১২ বার করবেন,১ মিনিট রেস্ট নিয়ে পুনরায় করবেন। ১০-১২ বারে এক সেট হবে।প্রথম দিন দুই সেট করবেন।পরে আস্তে আস্তে তিন সেটে যাবেন।
এটা আপনার মেদ কমাতে খুবই উপকারী।
৩। সিট আপস ব্যায়াম ( sits ups Exercise )
- এটি করার জন্য প্রথমেই একটি সমতল জায়গা বা মেঝেতে শুয়ে পড়তে হবে।
- এরপর আপনার পা দুটো ভাঁজ করে নিন।
- হাত দুটো মাথার পিছনে কিংবা কানের পাশে রাখতে পারেন।
- এরপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা সামনের দিকে উঠে বসতে হবে।
- পা দুটো ভাঁজ অবস্থায় রাখবেন।
- তারপর আবার আগের মতো শুয়ে যাবেন।
এভাবে ১০ বার করে সেট পূর্ণ করবেন এবং প্রথম দিনে ১০ বার করে ২ সেট করবেন। পরবর্তীতে সেট সংখ্যা বাড়াবেন।
পেটের মেদ কমানোর উপায় নিয়ে শেষ কথা
আমরা পরীক্ষিত ও কার্যকরীভাবে পেটের মেদ কমানোর উপায় জানলাম এবং পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম ছবি সহ দেখলাম। পেটের মেদ নিয়ে আর দুশ্চিন্তা না করে আজকেই শুরু করে দিন আপনার প্রাত্যহিক রুটিনে পেটের মেদ কমানোর উপরের সব কয়টি উপায়।
এসব পেটের মেদ কমানোর উপায় খুব শীঘ্রই আপনাকে আপনার পেটের অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ওজন কমাতে ও সুন্দর ফিট বডি তৈরি করতে সাহায্য করবে।
পড়ে বেশ ভালো লাগলো, ট্রাই করবো ইনশাআল্লাহ
আপনার জন্য শুভকামনা, ফি আমানিল্লাহ।
Nice post
ধন্যবাদ
আর্টিকেলটি পড়ে উপকারী মনে হলো এবং ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ