কেমন হয় মৌমাছিদের জীবনধারা, সমাজব্যবস্থা? (প্রাণীর আচরণ, জীববিজ্ঞান ২য় পত্র)

জীববিজ্ঞান ২য় পত্র প্রাণীর আচরণ

সামাজিক প্রানী বললেই প্রথমে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে মৌমাছিসহ একটি মৌচাকের ছবি। কিন্তু এদের সামাজিক জীবনযাত্রার গভীর কর্মকান্ড দেখের সুযোগ ও সময় আমাদের হয় না! দ্বাদশ শ্রেণীর জীব বিজ্ঞান ২য় পত্র প্রাণি বিজ্ঞান বিষয়ের প্রাণীর আচরণ অধ্যয়ে বেশ সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি সবগুলো বই থেকে তথ্য নিয়ে সহজভাবে মৌমাছির জীবনধারা তুলে ধরতে। চলুন শুরু করা যাক।

Honey bee বা মৌমাছি arthropoda পর্বের Insecta শ্রেনির hymenoptera বর্গের Apis গণভুক্ত প্রানী। এদের বিস্তৃতি বিশ্বব্যাপি। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির মৌমাছি পাওয়া যায় যথা- Apis indica, Apis dorsata, Apis florea. ইউরোপ ও আফ্রিকায় প্রাপ্ত মৌমাছির প্রজাতি হলো যথাক্রমে Apis mellifera, Apis adamsoni.

মৌমাছি সামাজিক প্রানী, এরা পরার্থপরতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এদের সমাজের প্রতিটি সদস্য সমাজের জন্য নিবেদিত প্রাণ। চাকের প্রত্যেক সদস্য নিজের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে অন্য সদস্যদের কল্যাণে একমনে কাজ করে যায়। সমাজের সদস্যদের এমন মনোভাবকে altruism বলে।

মৌমাছির ৫০০০০-১০০০০০ সদস্য একত্রে কলোনি গঠন করে বাস করে। এদের বাসাকে মৌচাক (honey comb) বলে।

Apis indica গাছের ফোকর, গাছের ডাল, ঘন ঝোপ-ঝাড়, উঁচু টিবির মাটির গর্তে, দালানে বা ঘরের সুবিধাজনক স্থানে বাসা তৈরি করে। এদেরকে গৃহেও পালন করা যায়। Aois dorsata গাছের উঁচু ডালে বা ফোকরে, দালানের কার্নিশে বাসা তৈরি করে। তবে এরা বছরে একবার মাইগ্রেশন করে পাহাড়ি এলাকায় যায়। Apis florea গাছের ডালে কিংবা ঘরের কার্নিশে ক্ষুদ্র বাসা তৈরি করে।

মৌমাছির জাত বা প্রকারভেদ

মৌমাছিদের জাত বা কাস্ট(cast) দেখা যায়। মৌমাছির কলোনিতে তিন জাতের মৌমাছি থাকে। এরা হলো;

  • একটি রানী (queen)
  • কয়েক হাজার কর্মী (worker) এবং
  • কয়েকশত পুরুষ (drone)।

তিন ধরনের মৌমাছি

রানী মৌমাছি কি? এর গঠন, উৎপত্তি এবং কাজ কি?

একটি মৌচাকে মাত্র একটি রানী মৌমাছি থাকে। এটি আকারে অনেক বড়। ডানাগুলো ছোট এবং উদরের শেষপ্রান্ত ক্রমশ সরু। এ সরু প্রান্তে বাঁকানো হোল থাকে যা রুপান্তরিত ওভিপজিটর (ovipositor )। এদের প্রোবোসিস ও রেণু থলি থাকে না, পদ ক্ষুদ্রাকৃতি, ম্যান্ডিবল বা চোয়াল তীক্ষ্ণ, মোম ও মধু সৃষ্টি করতে পারে না, লালাগ্রন্থি নেই। এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ২-৩ বছর।

রানীর উৎপত্তি

রানী মরে গেলে কিংবা প্রজননে অক্ষম হলে কর্মীরা বিকাশরত লার্ভাকে বিশেষভাবে তৈরি রাজকীয় জেলি (royel jelly) খাওয়ায়, ফলে কলোনিতে ১৬ দিনের মধ্যে নতুন রানী সৃষ্টি করে। এ ঘটনাকে সুপার সিডিওর (super sedure) বলে।

আরো পড়ুন:  অ্যামাইনো এসিড মনে রাখার ছন্দ - কোষ রসায়ন

নতুন রানী বের হয়ে মৌচাকে বিকাশরত অন্যান্য রানীদের হুল ফুটিয়ে হত্যা করে। একই সময় দুটি নতুন রানী বের হলে এরা মরণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে জয়ী রানী কলোনির সার্বিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে।

রাজকীয় জেলি কি এবং কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয়?

রাজকীয় জেলি কর্মী মৌমাছির হাইপোফ্যারিঞ্জিয়াল ও ম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত ভিটামিন, প্রোটিনও স্টেরয়েড সমৃদ্ধ একধরনের পুষ্টিকর খাদ্য যা রানী মৌমাছিকে লার্ভা দশায় ও পূর্ণাঙ্গ দশায় খাওয়ানো হয়। এর রাসায়নিক উপাদান হলো: পানি (৬৬.০৫%), প্রোটিন (১২.৩৪%), চিনি (১২.৪৩%), লিপিড (৫.৪৬%), অজৈব বস্তু (০.৯২%), ভিটামিন ও অন্যান্য বস্তু (২.৮০%)।

বর্তমানে রাজকীয় জেলি ত্বক চর্যায় দামী প্রসাধন হিসেবে বাজারে বিক্রি হয় যা ত্বকের ভাঁজ ও বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্যে করে।

রানী মৌমাছির কাজ

রানী মৌমাছি কলোনিতে একমাত্র প্রজননক্ষম স্ত্রী মৌমাছি। জীবদ্দশায় একটি রানী মৌমাছি প্রায় দেড় লক্ষ ডিম পাড়ে। রানী মৌমাছি কলোনির স্বার্থে কঠোরভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে। রানী মৌমাছির মস্তক থেকে ক্ষরিত ফেরোমন (pheromone=oxydecenoic acid ) মৌচাকের বিভিন্ন সদস্যদের সংঘবদ্ধ রাখতে সাহায্যে করে।

পুরুষ মৌমাছি (drone) কি? এদের গঠন, আচারণ, উৎপত্তি, কাজ কি?

ড্রোন কলোনির প্রজননক্ষম পুরুষ মৌমাছি। কলোনিতে ৩০০-৩০০০ পর্যন্ত ড্রোন থাকে। এরা কর্মী ও রানীর মাঝামাঝি আকৃতির, প্রশস্থ দেহ, বৃহৎ চক্ষু, ক্ষুদ্রাকার তীক্ষ্ণ চোয়াল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এদের মোমগ্রন্থি, মধু সংগ্রহকারী যন্ত্র ও হুল থাকে না কিংবা মুখোপাঙ্গ খাদ্য সংগ্রহের উপোযোগী নয়।

এরা মৌচাকের অলস প্রকৃতির ও কোলাহল সৃষ্টি কারী সদস্য। এরা প্রতিরক্ষা বা খাদ্য সংগ্রহের কাজে অংশগ্রহণ করে না। এরা এমন অলস প্রকৃতির যে নিজের খাদ্য নিজে গ্রহণ করতে পারে না। কোন কারণে কর্মী মৌমাছি না খাওয়ালে এরা মারা যায়।

অনিষিক্ত ডিম থেকে পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় পুরুষ মৌমাছি সৃষ্টি হয়। তাই এরা হ্যাপ্লয়েড(n) প্রকৃতির হয়ে থাকে। পরিণত পতঙ্গে রূপান্তরিত হাওয়ার ১০ দিন পর এরা রানী মৌমাছিকে নিষিক্ত করে। এটিই পুরুষ মৌমাছির একমাত্র কাজ।

এরা জীবনে একবারই রানী মৌমাছিকে নিষিক্ত করতে পারে এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করে। প্রজাতির বংশ রক্ষার্থে পুরুষ মৌমাছির এরকম আত্মত্যাগ কেবল পরার্থপরতাই প্রকাশ করে।

কর্মী মৌমাছি কি এবং এর গঠন, উৎপত্তি, আচরণ, কাজ কি?

কর্মী মৌমাছি কলোনির মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকারের মৌমাছি। বন্ধ্যা স্ত্রী (sterile female) জাতীয় মৌমাছি। এরা কালো বা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। এদের উদরের শেষ প্রান্তে একটি হুল (sting) থাকে এবং পশ্চাৎ বক্ষে বিদ্যমান পায়ে রেণু থলি (pollen basket) ও রেণু চিরুনী (pollen comb) থাকে। উদরের অঙ্কীয় দিকে একটি মোমগ্রন্থি (wax gland) বিদ্যমান থাকে।

একটি মৌচাকে কর্মী মৌমাছির সংখ্যা ৬০০০০-৮০০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। নিষিক্ত ডিম থেকে উৎপন্ন হলেও এরা জননে অক্ষম। যেসব লার্ভাকে শ্রমিক মৌমাছিরা মৌরুটি (শ্রমিক মৌমাছির হাইপোফ্যারিঞ্জিয়াল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত পদার্থ, মধু ও নেকটারের সঙ্গে মিশে যে মিশ্র খাদ্য সৃষ্টি হয়) সরবরাহ করে তার পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় কর্মী মৌমাছিতে পরিণত হয়।

আরো পড়ুন:  মধু খাওয়ার উপকারিতা | 10 Benefits of Eating Honey

বৃদ্ধির সপ্তম দিন থেকে এরা মৌচাকের বাইরে আসতে সক্ষম হয়। কেবলমাত্র ২০ দিন বয়সের পরেই নেকটার ও রেণু সংগ্রহ করার জন্য এদের উড্ডয়ন শুরু হয়। এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ৫০ দিন।

মৌমাছির নৃত্য

খাদ্য অন্বেষণকারী মৌমাছি মৌচাকের নিকটে দু’ধরনের নৃত্য (চক্রাকার ও ওয়াগল) প্রদর্শন করে অন্যান্য মৌমাছিদের খাদ্যের উৎস সম্পর্কে অবগত করে। এ নৃত্যকে মৌমাছির ভাষা (bee language) বলে।

1947 খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিস (karl von frisch) মৌমাছির নৃত্যের গতি -প্রকৃতি সম্পর্কে প্রথম আলোকপাত করেন। এজন্য এ বিজ্ঞানীকে 1973 খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়।

মৌমাছির চক্রাকার নৃত্য(round dance)

মৌমাছির চক্রাকার নৃত্য কতগুলো বৃত্তাকার গতিপথের সমাহার। এ নৃত্যের মাধ্যমে এরা বাসা থেকে 100 মিটার কম দূরত্বের কোনো খাদ্যের উৎস সম্পর্কে অন্য সদস্যদের অবহিত করে। তবে এতে খাদ্যের উৎস কোন দিকে তার কোনো নির্দেশনা থাকে না।

মৌমাছির চক্রাকার ওয়াগল নৃত্য

মৌমাছির ওয়াগল নৃত্য ( waggle dance)

মৌমাছির ওয়াগল নৃত্যে এমন একটি গতিপথ সৃষ্টি হয় যা ইংরেজি ‘8’ এর মতো দেখায়। ওয়াগল নৃত্যের মাধ্যমে মৌমাছি বাসা থেকে 150 মিটার অধিক দূরত্বের কোনো খাদ্যের উৎস সম্পর্কে অন্য সদস্যদের অবহিত করে। এতে খাদ্যের উৎসের দিক সম্পর্কেও নির্দেশনা থাকে।

নৃত্যের পাশাপাশি সূর্যের অবস্থান এবং মৌচাকের সাথে সূর্যের কৌনিক অবস্থান খাদ্যের উৎস ও দূরত্ব সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। মৌমাছির উড্ডয়ন বা নৃত্যের সময় এদের ডানার দ্রুত সঞ্চালনে একটি নিম্নমাত্রার (250-300 Hz) শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।

কর্মী মৌমাছির কাজ

এরা মূলত মৌচাকে পরিচ্ছন্নতা, বাচ্চার যত্ন নেয়া, খাদ্য অন্বেষণ, রানীর পরিচর্যা করা, মৌচাক পাহাড়া দেয়া, নেকটার, রেণু, পানি ইত্যাদির সাহায্যে মধু সৃষ্টি করা, ডানা সঞ্চালনের দ্বারা বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করে মৌচাকের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় রাখা, প্রোপোলিস (propolis) উৎপাদন করে।

প্রোপোলিস হলো রেজিন ও ব্যালসাম (50%), মোম (30%), তৈল(10%), ও নেকটার (5%), গঠিত এক ধরনের জৈব যৌগ যা উদ্ভিদ থেকে সংগৃহীত হয়। এগুলো মৌচাকের ফাটল ও ছিদ্র মেরামতের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এর প্রলেপ দিয়ে রাখার ফলে মৌচাকে ক্ষতিকারক অণু-উদ্ভিদের বৃদ্ধি প্রতিহিত করে।

কর্মী মৌমাছিদের মধ্যে altruism সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এরা আমৃত্যু কলোনির স্বার্থে কাজ করে। কর্মী মৌমাছি ঘণ্টায় 15 মাইল গতিবেগে একটানা সর্বোচ্চ 6 মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে এবং প্রতিটি ভ্রমণে এরা 50-100 টি ফুলে গমণ করে।

একটি কর্মী মৌমাছি তার সারাজীবনে মাত্র 1/2 টেবিল চামচ পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারে। এক কিলোগ্রাম মধু সংগ্রহ করতে একটি মৌচাকের সকল কর্মী মৌমাছির সর্বমোট 90000 মাইল পথ উড়তে হয়।

আরো পড়ুন:  প্রাণীর বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস, প্রাণীর পরিচিতি : পর্ব মনে রাখার ছন্দ

কলোনি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে এরা শত্রুর দেহে হুল ফুটিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। একটি কর্মী মৌমাছি জীবনে একবারই হুল ফুটাতে পারে এবং এরপর মারা যায়। এরা কলোনির স্বার্থে জীবন উৎসর্গ করে। এরা কোনো ছোঁয়াচে জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হলে কলোনির স্বার্থে কলোনি ত্যাগ করে একাকী জীবনযাপন করে।

মৌমাছির খাদ্যের যোগান পদ্ধতিটি কেমন?

যে কোনো সমাজের প্রথম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা খাদ্য। দূর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষ করে শীতকালে এবং প্রতিদিনকার খাদ্যের সংস্থান ও মজুত গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি কলোনির অগণিত কর্মী মৌমাছি সকাল-সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করে। মৌচাকের একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিজেদের ভাবী বংশধরদের জন্য খাদ্য জমিয়ে রাখে।
মৌমাছিদের মৌচাক

মৌমাছিদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

মৌমাছি খুবই শান্তিপ্রিয়। অকারণে আক্রমণ করা তাদের স্বভাববিরুদ্ধ। তাদের কষ্টার্জিত সম্পদ মধু অবৈধভাবে সংগ্রহের উদ্দেশ্য আণুবীক্ষণিক জীব থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত চাকে হানা দেয়।

তাদের প্রতিহত করতে প্রকৃতি মৌমাছিকে হু নামক মারাত্মক বিষাক্ত অস্ত্রে সজ্জিত করছে। একটি হুলের দংশন যে কোনো পতঙ্গ বা ইঁদুরজাতীয় ক্ষুদ্রদেহী স্তন্যপায়ীর মৃত্যু ঘটাতে যথেষ্ট।

মৌমাছির সোয়ার্মিং বা ঝাঁক বাধা (swarming) কি?

যে পদ্ধতিতে মৌমাছি প্রাকৃতিকভাবে প্রজাতির সংখ্যাকে বৃদ্ধি করার জন্য মৌচাক থেকে দলবদ্ধভাবে বেরিয়ে আসে এবং নতুন কলোনি সৃষ্টি করে তাকে সোয়ার্মিং বা ঝাঁক বাধা (swarming) বলে।

মৌমাছিরা কখন সোয়ার্মিং করে?
  • যখন রানী ডিম পাড়তে অসর্ম বা বন্ধ্যা হয়
  • যখন শ্রমিক মৌমাছির সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে যায়
  • মৌচাকে বায়ু চলাচল বিঘ্ন ঘটলে
  • অতিরিক্ত খাদ্যের প্রয়োজন হলে
  • শত্রু বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রয়োজন পড়লে।

রানী মৌমাছিকে একটি জাতির সম্রাজ্ঞী, এমনকি দেবী হিসেবে অভিহিত করা হয়। তা সত্ত্বেও রানীর অনেক কাজই কলোনির অন্যান্য সদস্যের সিদ্ধান্তে করতে হয়। যেমন, উপযুক্ত সময় এবং মৌমাছিদের সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া রাণী একটি ডিমও পাড়ে না। জন্মগত বিরোধিতার কারণেই রাণী কখনও শূন্য রাণী কুঠুরিতে ডিম পাড়ে না। কিন্তু অন্যরা তাকে সে কাজে বাধ্য করে। সোয়ার্মিং এর সময়ও রাণী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বাস্তুত্যাগে উৎসাহী মৌমাছিদের চাপে চাক ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

রাণী অন্যান্য মৌমাছিদের কাছ থেকে যেমনি শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করে, রাণীও তার বিনিমিয়ে খাদ্যের নিশ্চিয়তা বিধান ও মৌমাছিদের সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে নেতৃত্বে বহাল থাকে।

কর্মী মৌমাছিরা রানীর পরিচর্যা করে। রানীর দেহ পরিষ্কার করা, শরীর আঁচড়ান, মৌচাক থেকে মল অপসারণ ও পুষ্টিকর রাজকীয় জেলি খাওয়ানো তাদের কাজ।

রানী মৌচাকের যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে আজীবন এক অটুত সমাজ পরিচালোনা করে। একটি কলোনিতে রানীই প্রধানতম ব্যক্তিত্ব। রানীর উপরই নির্ভর করে একটি চাকের সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও ক্ষমতা, জীবনের প্রতিটি ছন্দ ও কর্মশক্তি। সমগ্র মৌচাক রানী পরিচালনা করে।

তাই বলে রাণীর জুলুম- নির্যাতন ওরা মুখ বুজে সহ্য করে না, বরং আক্রমণাত্মক বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাণী মৌমাছিকে হয় তাড়িয়ে দেয় নয়তো মেরে ফেলে। এভাবে একেকটি চাকের মৌ সমাজ টিকে থাকে।

শেষ কথা

মৌমাছির সামাজিক জীবনযাত্রা এমনই চিত্তকর্ষক, তাদের আচরণ ও কাজের বৈচিত্র‍্য এমন বিষ্ময়কর যা দেখলে মনে হবে মানুষের মতো মৌমাছিরও হয়তো আবেগ, আনন্দ, দুঃখ, ভালোবাসা আছে, রয়েছে আত্মত্যাগের মনোভাব।

মৌমাছির সামাজিক জীবন এভাবে মানুষকে লক্ষ বছর ধরে ভাবিত করে রেখেছে, এখনও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

2 thoughts on “কেমন হয় মৌমাছিদের জীবনধারা, সমাজব্যবস্থা? (প্রাণীর আচরণ, জীববিজ্ঞান ২য় পত্র)”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top